মিজানুর রহমান
ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমার চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তর (১৫) হত্যা মামলায় তিনজনের ফাঁসি ও আরো তিন জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর ১২ টার দিকে
ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
এতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিদের অন্য ধারায় যাবজ্জীবন এবং এক লাখ টাকা জরিমানা এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিদের একটি ধারায় ১৪ বছরের এবং অপর একটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদি গ্রামের মাহাবুব আলম (৩৬), পিপরুল গ্রামের কামাল মাতুবর (৩২) ও দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের খোকন
মাতুব্বর (৪৮)।
এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত
আসামিরা হলেন, তালমা ইউনিয়নের পাগলপাড়া গ্রামের
আশরাফ শেখ (৩৪) ও তাঁর ভাই আজিজুল শেখ (৩২)
এবং দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের সুজন
মাতুব্বর (৩৬)। পাশাপাশি তাদের সকলকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় আজিজুল শেখ ছাড়া
বাকি পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত
ছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় তাদের জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ জুন রাতে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বাসা
থেকে বের হওয়ার পরে অপহরণ করা হয়
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা
ইউনিয়নের চর মানিকদী পাগলপাড়া গ্রামের
গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ৮ম শ্রেণি
পড়ুয়া ছেলে আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরকে। পরেরদিন এ ঘটনায় অন্তরের মা জান্নাতি
বেগম নগরকান্দা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। ওই রাতেই অন্তরের মা জান্নাতির মোবাইলে ফোন করে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়।
১৪ জুন পুলিশের উপস্থিতিতে একটি
ইরিব্লকের মেশিনঘরে টাকা রেখে অপহরণকারীদের নগদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা
দেওয়া হয়। ১৫ জুন অন্তরের মা ১৬ জনের নাম উল্লেখ
করে নগরকান্দা থানায় অপহরণ মামলা
করেন।
এরপর ২২ জুন ফরিদপুর প্রেসক্লাবে অন্তরের পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে। পরেরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় এ খবর ছবিসহ
প্রকাশের পর ২৪ জুন পুলিশ মুক্তিপণ
দাবিকৃত মোবাইলের মালিক মাহবু্ব আলম ও তার ভাই জুবায়ের বেপারিকে গ্রেফতার করে। এরপর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২৬ জুন রাতে পুলিশ তালমার একটি চক এলাকার খাল পাড় থেকে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরের লাশ উদ্ধার করে।
২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নগরকান্দা থানার এসআই নিখিল চন্দ্র অধিকারী ৬ জনকে
অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল
করেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিহত অন্তরের মা জান্নাতি বেগম
আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তিনি বলেন, সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ দেয়ায় আমি সন্তুষ্ট। আমি চাই এই রায় অবিলম্বে কার্যকর করা
হোক।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) স্বপন কুমার পাল
জানান, দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অনিমেষ রায় ও বিমল তুলশিয়ান বলেন, এ রায়ে তারা
সন্তুষ্ট নন। তারা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে
আপিল করবেন।
Leave a Reply