সুজন কুমার রায়
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
মনের বাসনা পূরন করতেই গ্রামাঞ্চলে আয়োজন করা হয় পদ্নপুরাণ গানের পালা।
হিন্দু শাস্ত্রে আঠারটি পূরাণ রয়েছে, পদ্নপুরাণ হচ্ছে তৎমধ্যে একটি। এই পূরাণের প্রধান দেবতা সর্পদেবী মনসা। মনসা হচ্ছে শিবের কন্যা। সমুদ্র মন্থনের সময় শিব বিষ পান করেছিল এবং সেই বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত করে ছিল মা মনসা। এরপর থেকে মা মনসাকে বিষহরীও বলা হয়।পদ্নপুরাণ এর মৃল উপজীব্য চাঁদ সদাগরের উপর দেবী মনসার অত্যাচার, চাঁদের পুত্র লখিন্দরের সর্পাঘাত মৃত্যু ও পুত্রবধু বেহুলার আত্নত্যাগের উপাখ্যান। সাধারনত রাত জেগে মনসা মঙ্গলের নাটক পরিবেশন করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গভীর রাত পর্যন্ত তারা যা করেন এর পুরোটাই নাচ গান নাটক। স্হানীয়দের বিশ্বাস, এই মনসা গানের আয়োজন করলে সর্পের কামড়ে পরিবারের কারো অকাল মৃত্যু ঘটবে না। এই পদ্নপুরাণ গানের মৃল বিষয় হচ্ছে কালনাগিনী সাপের দংশনে লহ্মীন্দরের মৃত্যু।
চুনের ফোঁটা পানের বোটা এই দিক দিয়ে হলো মনসার ঘ্যাটা (পথ)। এই কথা বলে কারিগর বিশ্বকর্মা মা মনসার চাপে বেহুলা লখিন্দরের লোহার বাসর ঘরে ছোট একটি ছিদ্র করে দেন। সেই ছিদ্র দিয়ে মা মনসার পাঠানো একটি সাপ লখিন্দরকে দংশন করে। সাপের দংশনে নিহত লখিন্দরকে ভাষিয়ে দেওয়া হলো কলার ভেলায়। মৃত লখিন্দরের পাশে সদ্য বিধবা বেহুলা। গানের আগা গোড়া বেহুলারই কাহিনী। যে মনসা দেবীকে পূজা দিতে চাননি চাঁদ সওদাগর, শত বছর ধরে বাঙ্গালী সেই মনসা দেবীকে পূজো দিয়ে যাচ্ছে। শত বছর ধরে বংশ পরস্পর এ রীতি পালন করে আসছেন জনগণ। প্রথম থেকে একটানা সাপের গীত আর সাপের বর্ণনা। নানা প্রকার ও নানা জাতের বাস্তব ও কাল্পনিক সাপের বর্ণানায় পূর্ণ এই প্রথম গানের আসর।শেষে বর্ণনা করা হয় ভূরা বা ভেলা ভাসিয়ে বেহুলার ইন্দ্রপূরিতে গমন ও মৃত স্বামীর প্রান ফিরে পাওয়ার বর্ণনা।এভাবেই শেষ করতে হয় মৃল অনুষ্ঠানের। গত ২৭ মার্চ ২০২৪ ইং রোজ বুধবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের বকুলতলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শ্রী রণজিৎ অধিকারীর বাড়ির আঙ্গিনায় এই গানের আসর বসে। টানা তিন দিন ব্যাপি দিনে ও রাতে চলছে এই গানের আসর। তবে এই অনুষ্ঠান সম্পৃন্ন করতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। কিন্তু অর্থনৈতিক দৈনতার কারনে দুই রাত ও এক দিনের মধ্যেই শেষ করতে হয় এই আসর। এই পদ্নপুরাণ গানের জন্য একটি দলে ১০-১৫ জনের সদস্য প্রয়োজন। ঢোলক বাদ্যের সঙ্গে আরও কিছু বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কখনো গানের আসর ও কখনো কথা কাব্য নিয়ে রচিত এই পদ্নপুরাণ গান। এই জন্য কোন মুখস্থ বিদ্যায় কিংবা বই পড়ে তাদের শিখতে হয়নি। এ শিল্পীরা সরাসরি এই গানের আসর মাতিয়ে রাখেন। দর্শক শ্রোতারা বেশ উপভোগ করেন পদ্নপুরাণ। ৩ দিন ব্যাপি চলছে রাত ১২ পর্যন্ত পদ্নপুরাণ এই গানের আসর, দুর দুরান্তর থেকে প্রতিদিন গান শুনতে আসেন এলাকার মহিলা ও পুরুষগণ।
Leave a Reply