সুজন কুমার রায়
কাজে যোগদানের পর অনেক ওয়েম্যানই চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
গত ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে দুই ধাপে ২ হাজার ১৭২ ওয়েম্যান নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চতুর্থ শ্রেণীর (১৯তম গ্রেড) ওয়েম্যান পদের মূল কাজ রেলপথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। এছাড়া রেললাইনের নাট-বল্টু টাইট দেয়াসহ ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিও তারাই করে থাকেন। কায়িক পরিশ্রমনির্ভর পদটিতে আবেদনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করেছে এসএসসি বা সমমান। যদিও সর্বশেষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে যারা ওয়েম্যান হিসেবে চাকরি পেয়েছেন, তাদের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স পাস।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এসব সমস্যারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘শুধু রেলে নয়, যেকোনো চাকরিতেই এখন দেখা যাচ্ছে; যে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়, তার চেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতাধারী প্রার্থীরা আবেদন করে। দেশে চাকরির ভয়াবহ অভাব। আমাদের গড় বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ হলে কী হবে? যুব বেকারত্বের হার তো ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশে চাকরির যে অভাব রয়েছে, রেলের ওয়েম্যান পদে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি তারই প্রতিফলন।’
রেলওয়েতে মাস্টার্স পাস প্রার্থীরা ওয়েম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও। সম্প্রতি কমিটির দ্বিতীয় সভার কার্যবিবরণী প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ওয়েম্যান পদে চাকরির যোগ্যতা হলো এসএসসি পাস ও প্রার্থীদের কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। কিন্তু যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের সবাই মাস্টার্স পাস। প্রার্থীরা মাস্টার্স পাসের তথ্য গোপন করে এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিতে আবেদন করেছে।
কার্যবিবরণীতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে কাজের ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু এখানে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি করা হয়েছে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই। রেলের নিয়োগের জন্য ভিন্ন নীতিমালা না থাকায় এ ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় এতে।
কাজে যোগ দেয়ার পর মাস্টার্স পাস ওয়েম্যানদের অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ওয়েম্যান পদে প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি একটি অপেক্ষমাণ তালিকাও রেখেছি। যারা চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তাদের শূন্য পদ এ অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পূরণ করা হবে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা জানি, মাস্টার্স পাস করা ওয়েম্যানরা চাকরিতে থাকবে না। এ কারণে অপেক্ষমাণ তালিকা বড় করে রাখা হয়েছে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এক ধরনের বিপদের মধ্যেও আছি। ভবিষ্যতে রেলে এ ধরনের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন জটিলতা যেন না হয় সেজন্য চাকরি নীতিমালা পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা করছি। তবে এটা তো আমরা (রেলপথ মন্ত্রণালয়) একা করতে পারব না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন লাগবে।’
Leave a Reply