“বিকেবি-রাকাব একীভূতকরণে উপকৃত হবে উত্তরের কৃষক।
রাকিবুল ইসলাম উপজেলা প্রতিনিধি:
১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির ২৭ নং আদেশ মূলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (BKB) প্রতিষ্টিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার পর থেকে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এসেছে।প্রেসিডেন্ট হু মু এরশাদ ১৯৮৬ সালে কৃষি ব্যাংক কে চার ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্তের ১ম পর্যায়ে পরীক্ষামুলক ভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ৫৮ নং অধ্যাদেশ জারী করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে বিভক্ত করে রাকাব প্রতিষ্ঠা করে কিন্তু পরবর্তীতে রাকাব প্রতিষ্ঠার আশানুরুপ ফল না পাওয়ায় বাকী বিভাগগুলোতে কৃষি ব্যাংক বিভক্ত করেননি । সুতরাং এতে প্রমানিত হয় যে রাকাব প্রতিষ্ঠা করাই একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো।
যমুনার উত্তরপাড় তথা তৎকালীন রাজশাহী বিভাগে কার্যরত কৃষি ব্যাংকের শাখা সমুহ নিয়ে, রাজশাহীতে প্রধান কার্যালয় করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব গঠিত হয়। ১৫ মার্চ ১৯৮৭ এ ব্যাংকের যাত্রা , এর মাঝেখানে উত্তরবঙ্গে রংপুর আলাদা বিভাগ হলে ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক নামেই ব্যাংকটা অদ্যাবধি কার্যরত আছে । সম্প্রতি সরকার ব্যাংক দুটিকে পুনরায় একীভূত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। যা নি:সন্দেহে এক মহৎ উদ্যোগ। এছাড়া আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে এরকম একই ধরনের প্রতিষ্ঠান একীভূত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে আঞলিক ব্যাংক হিসেবে এর ডিপোজিট সংকট রয়েছে যা একমাত্র একীভূত করার মাধ্যমেই সম্ভব। বিকেবি, রাকাব সম্পূর্ণ সরকারী ব্যাংক। সরকারী নির্দেশনায় সরকারের ঋণ কার্যক্রম সহ সকল কাজে সহায়ক ভুমিকা পালন করে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর কৃষি ঋণ বিতরণ কর্মসূচী ঘোষণা করে যার উল্লেখযোগ্য অংশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে এ দু’টি ব্যাকের উপর। এমনকি চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩৫০০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে কার্যরত ৫৮ টা ব্যাকের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা ভাগ করে দেয়া হয়েছে যার মধ্যে শুধু বিকেবি-রাকাবের লক্ষ্যমাত্রা ৮৭৫০কোটি টাকা যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ২৫%। বর্তমানে ব্যাংক দু’টি একীভূত/মার্জ করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা সাধুবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। দুটি ব্যাংকেরই ঋণ কার্যক্রম, ডিপোজিট কার্যক্রম সহ সকল ধরনের পরিচালন কার্যক্রম, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন স্কেল, পদবী, পদসোপান একই ধরনের । বিকেবির শাখার সংখ্যা ১০৩৮ আর রাকাবের ৩৮৩, উভয় ব্যাকের সব গুলো শাখাই অনলাইন।
ব্যাংক দুটো একীভূত করে লাভ কি কি হতে পারে কিংবা যে কারনে বিকেবি-রাকাব একীভূত হলে রাকাবেরই ভালঃ
১. ব্যাংক দুটো একীভূত করে তথা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা গেলে রাজশাহী প্রধান কার্যালয় বিলুপ্ত হবে ফলে পরিচালন ব্যয় হ্রাস পাবে, পরিধারন কার্যক্রম সহজ হবে।
২. বিকেবি-রাকাব একীভূত হলে রাকাবেরই ভাল।বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি অনুসারে বিশেষায়িত ব্যাংকের জন্য AD Ratio হচ্ছে ৮৭ অর্থাৎ ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ৮৭ টাকা। কিন্তু রাকাবের AD Ratio ১১০ হওয়ায় কারনে কৃষকের চাহিদা থাকা সত্তেও রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের নতুন ঋণ দিতে পাচ্ছেনা আমানতের অভাবে। আবার আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি হওয়ায় আমানতকারীদের আমানত ফেরত পাওয়া সময় সাপেক্ষ।অপর দিকে বিকেবির AD Ratio মাত্র ৭৮, যদি রাকাব- বিকেবি একীভূতকরণ করা হয় তাহলে কৃষি ব্যাংকের AD Ratio হবে ৮৩ সেক্ষেত্রে বিকেবির চেয়ে রাকাবের আমানতকারী আমানত ফেরত পাওয়া ও রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের ঋণ প্রাপ্তিতে নতুন দাড় উন্মোচিত হবে যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যানকর এবং খাদ্য উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে ।বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা বেশি আবার এই কৃষক পরিবারের সদস্যরাই মধ্য প্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে দেশে বৈদেশিক রেমিট্যান্স পাঠায় কিন্তু রাকাবের সক্ষমতার অভাবে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের সেই কৃষকগণ রাকাব রেমিট্যান্স প্রদানের ক্ষেত্রে কোন সেবা দিতে পাচ্ছে না যার দৃষ্টান্ত হচ্ছে চলতি এপ্রিল’২০২৪ মাসের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত রাকাবের অর্জন ০.০০ (শুন্য) অপর দিকে বিকেবির ঈর্ষণীয় অর্জন সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে, ঠিক সেই মহুর্তে একটি কুচক্রি মহল (আঞ্চলিক সিন্ডিকেট) রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় লিপ্ত হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীতা করছে।
৩. কৃষি প্রধান রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের মানুষের মাঝে রাকাব-বিকেবি একীভূত করে সেবা প্রদান করলে বিকেবির চেয়ে রাকাবই বেশী সুবিধাভোগী হবে।
৪. বিকেবির শাখা যমুনার ঐপাড়ে আর রাকাবের ঢাকার ১টা শাখা ছাড়া আর কোন শাখা এপাড়ে না থাকায় উভয় ব্যাকে কর্মরত হাজার হাজার কর্মী চাকুরী জীবনে নিজ এলাকা বা কাছাকাছি এলাকায় চাকুরীর সুযোগ ও সেবাদানে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় রাকাবের কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও একটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে খবরদারী বজায় রাখতে সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের ক্ষতি করতে বদ্ধপরিকর।
৫. সারাদেশের সমষ্টিক অর্থনীতির সাথে কৃষি অর্থনীতির গতি ফিরবে উত্তর জনপদে সবশেষে বলা যায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাথে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একইভূতকরণের মাধ্যমে শুধুমাত্র উত্তর জনপদের কৃষি অর্থনীতির বিপ্লব ঘটবে না তার সাথে রংপুর বিভাগের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিবর্তন ঘটবে।
Leave a Reply