রুবেল হোসাইন (সংগ্রাম) রংপুর
জমে উঠেছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ০৩ নং পায়রাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচন। সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমান নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব নিতে আগামি তিনবছরের জন্য নতুন দুই মুখ সহ পাঁচজন লড়ছেন চেয়ারম্যান পদে। উপ নির্বাচন হলেও বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি হওয়ায় বাড়তি আগ্রহ রয়েছে ভোটার এবং সমর্থকদের মাঝে।
৯ মার্চ ভোটকে সামনে রেখে নির্ঘুম রাত কাটছে প্রার্থী এবং সমর্থকদের। প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে রাতদিন উঠান বৈঠক, শোডাউন, মাইকিং করে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
প্রায় ২৪০০০ হাজার ভোটারের ইউনিয়নটিতে তফসিল ঘোষণার পরে ছয়জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলে যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচজনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। গত- শুক্রবার(২৩-ফেব্রুয়ারি) প্রতীক বরাদ্দ হলে সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম ঘোড়া প্রতীক এবং ফয়জার রহমান খাঁন চশমা প্রতীক পেয়েছেন। বিগত নির্বাচনের মতো এবারো আনারস প্রতীক পেয়েছেন আলহাজ্ব-মোফাজ্জল হোসেন মধু। নতুন মুখ জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী ফারুক হোসেন পেয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীক। পাঁচবারের সাবেক ইউপি সদস্য এবং নতুন মুখ আফজাল হোসেন পেয়েছেন ঢোল মার্কা।
পাঁচজন প্রার্থী হলেও ভোটারেরা ধারণা করছেন এবার মুল লড়াই হবে দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বিগত নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল ইসলাম রেজার সঙ্গে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী নতুন মুখ ফারুক হোসেনের। বিগত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করা জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মাহবুবার রহমান ৮৪৭৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান- রেজাউল ইসলাম রেজা, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ৫২১১ ভোট পেয়েছিলেন। তবে একই বাড়িতে নৌকা প্রতীক নিয়ে রেজাউল ইসলাম রেজার ভাবী মনোয়ারা বেগম মলি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করায় রেজাউল ইসলাম রেজাকে শেষ মুহূর্তে পরাজয় বরণ করে নিতে হয়েছিল।
তবে আগামি ৯- মার্চের উপনির্বাচনে ভোটে এবার বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন রেজাউল ইসলাম রেজা। কারন এবার তিনি তার পরিবারে একক প্রার্থী। অন্যদিকে জামায়াত সমর্থিত ফারুক হোসেন এবারে নির্বাচনি মাঠে নতুন। সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মাহবুবার রহমান জামায়াত সমর্থিত হলেও তিনি ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে প্রিয়। একারণে ফারুক হোসেন কতটা মাহবুবার রহমানের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারবেন, তা নিয়েও সংষয় রয়েছে ভোটারদের।
জামায়াত সমর্থিত ফারুক হোসেনের মত অস্বস্তিতে রয়েছেন রেজাউল ইসলাম রেজা। তার এই অস্বস্তির কারণ হচ্ছেন আলহাজ্ব- মোফাজ্জল হোসেন মধু। নিজেকে হেভিওয়েট দাবি করা মোফাজ্জল হোসেন মধুর দাবি, দীর্ঘদিন থেকে তিনি জনগনের বিপদে আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। এবার ইউনিয়নবাসী তাঁকে জনসেবা করার সুযোগ দিবে। তার সমর্থকদের দাবি, ভোটের পূর্ব মূহুর্তে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। মোফাজ্জল হোসেন মধু এবার চমক দেখাতে পারেন। তাছাড়া দুজনের বাড়ি প্রায় একই জায়গায়। এজন্য রেজাউল ইসলাম রয়েছেন চাপে।
সাবেক চেয়ারম্যান ফঁয়জার রহমান খাঁন আলোচনায় পিছিয়ে থাকলেও আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা সরব হলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে বলে অনেকের অভিমত। পাঁচবারের সাবেক ইউপি সদস্য, আফজাল হোসেন মাঠে সরব রয়েছেন। তবে শেষ মূহুর্তে তিনি কতটা সফল হবেন, তা কেউ নিশ্চিত নয়।
রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, আমি বিগত দুইবার নির্বাচিত হয়ে ইউনিয়নের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। একই দাবি,ফয়জার রহমান খাঁনের, তার মতে, সরকার দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে পাঁচ বছরে তার উন্নয়ন চোখে পড়ার মত। জনগণ তাঁকে অবশিষ্ট কাজ করার সুযোগ দিবে। ফারুক হোসেন বলেন, মরহুম মাহবুবার রহমান ইউনিয়নবাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা কতটা সফল। আমি নির্বাচিত হলে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের ভালো কাজের প্রতিদান আগামী ৯ মার্চ জনগন দিবে।
উল্লেখ্য যে, গত ৫ নভেম্বর রাতে হারুন নামে এক মাদকাসক্ত মাছ কাঁটার বটি দিয়ে কুপিয়ে জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানকে হত্যা করার পর চেয়ারম্যান পদটি শুন্য ঘোষণা করে জেলা রিটার্নিং কর্মকতা।
Leave a Reply